আনে ফ্রাংক হলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অনেক বড় এক জন সাক্ষী। তিনি ১৯২৯ সালের ১২ জুন জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মার কনিষ্ঠ সন্তান আনার একজন বড় বোন ছিল। জার্মানিতে নাজি বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর দেশ হতে ইহুদী ধর্মালম্বীদের বিতাড়িত করে। আনার পরিবারও ১৯৪১ সালে নেদারল্যান্ডস পাড়ি জমান ও তাদের জার্মান জাতীয় পরিচয় বাতিল করা হয। যুদ্ধের ভয়াবহ সেই মুহূর্তে লুকিয়ে থাকতে হয় আনা ও তাঁর পরিবারকে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনিশ্চিত দিনগুলোর কথা ডায়েরিতে লিখেছিলেন নিয়মিত ভাবে। তাঁর মৃত্যুর পর ডায়েরিটি প্রকাশিত হয়। সবাই জানতে পারে আনে ফ্রাংকের নাম। শ্রদ্ধায় স্মরণ করে এই নিষ্পাপ বালিকাটির কথা। ১৬ বছর বয়সে আমস্টারডামে বাবার অফিসে ২ বছর লুকিয়ে থাকাকালে নাৎসি সৈন্যদের হাতে আটক হন আনে ও তাঁর বড় বোন। এর পর তাদের বার্গেন বেলজান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ১৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেই ভয়াল দিনগুলোর ঘটনা আনা তাঁর ডায়েরিতে টুকে রাখতেন। যেখানে মৃত্যুপরোয়ানা মাথায় রাখা এক কিশোরীর জীবনদর্শনের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়।
যুদ্ধ শেষে তাঁর পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি বাবা অটো ফ্রাংক আমস্টারডামে ফিরে আসেন এবং আনের দিনলিপিটি (ডায়েরি) খুঁজে বের করেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই দিনলিপিটি ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটি মূল ওলন্দাজ ভাষা থেকে পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে প্রথম বারের মতো ইংরেজিতে অনুদিত হয়। এর ইংরেজি নাম হয় ‘দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল’। এটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ডায়েরিটি আনের ১৩তম জন্মদিনে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়েছিল। যেখানে আনের জীবনের ১২ জুন ১৯৪২ থেকে ১ আগস্ট ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সময়ের ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে।আনা ফ্রাঙ্ক সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত এক নাম। আনা ফ্রাঙ্কের লেখা ডায়েরি প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।