দ্বিতীয় অধ্যায়
জীবকোষ ও টিস্যু
কোষ :
সব জীবের গঠনগত ও কার্যগত একককে কোষ বলা হয়। এছাড়া অর্ধভেদ্য বা প্রভেদক ভেদ্য আবরণী দ্বারা পরিবেশ প্রোটোপ্লাজম দ্বারা নির্মিত সব প্রজননশীলতার কার্যগত গঠনগত একক কোষ বলা হয়।
জীবকোষ :
সব জীবের গঠনগত ও কার্যগত একককে কোষ বলা হয়। এছাড়া অর্ধভেদ্য বা প্রভেদক ভেদ্য আবরণী দ্বারা পরিবেশ প্রোটোপ্লাজম দ্বারা নির্মিত সব প্রজননশীলতার কার্যগত গঠনগত একক কোষ বলা হয় জীব কোষ হলো জীবদেহের একক কোন কোন বিজ্ঞানীর জীব কোষ কে জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়া-কলাপ এর একক হিসেবে বর্ণনা করেছেন লুই এবং 1969 সালে বৈষম্যভেদ্য পর্দা দিয়ে আবৃত এবং ক্রিয়া-কলাপ এর একক যা অন্য সহজ মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে এমন সত্তাকে কোষ বলেছেন।
সব কোষ একরকম নয় এদের মধ্যে গঠনগত পার্থক্য আছে যেমন তেমন আছে আকৃতি ও কাজের মধ্যে পার্থক্য নিউক্লিয়াসের গঠন এর ভিত্তিতে দুই ধরনের আদি কোষ এবং প্রকৃত কোষ।
আদিকোষ :
জীবের যেসকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই তাদেরকে আদি কোষ বলে।
আদি কোষের বৈশিষ্ট্য :
১। সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না।
২। এদের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বলা হয় এসব কোষের নিউক্লিয়াস কোন পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে না ।
৩।এদের নিউক্লিয় বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে ।
৪।এসব কোষে মাইট্রোকন্ডিয়া প্লাস্টিক এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গানু থাকে না তবে রাইবোজোম থসে।
৫। ক্রোমোজোমের ডিএনএ থাকে।
৬। নীলাভ সবুজ শৈবাল বা ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের কোষ পাওয়া যায়।
প্রকৃত কোষ :
যে সকল কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি দ্বারা নিউক্লিও বস্তু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত থাকে তাকে প্রকৃত কোষ বলে।
প্রকৃত কোষ দুই প্রকার। যথাঃ দেহকোষ এবং জনন কোষ।
দেহ কোষ
১। বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে এসব কোষ উৎপন্ন হয়।
২। দেহকোষে মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজন ঘটে।
৩।জীবের দেহ গঠনে অংশ নেয়।
৪। ক্রমোজমের সংখ্যা সাধারনত ডিপ্লয়েড (2n)।
৫।দেহকোষ বিভিন্ন ধরনের হয়।
জনন কোষ
১। যৌন প্রজনন ও জনুঃক্রম দেখা যায়—এমন জীবের প্রজনন অঙ্গে জননকোষ উৎপন্ন হয়।
২। জননকোষে মিয়োসিস কোষ বিভাজন ঘটে।
৩। জীবের প্রজননে অংশ নেয়।
৪।ক্রমোজোমের সংখ্যা সর্বদা হ্যাপ্লয়েড (n)।
৫।কেবল দুই (পুংজনন কোষ এবং স্ত্রী জননকোষ) ধরনের হয়।
কোষ প্রাচীর :
কোষের প্রোটোপ্লাজম যে শক্ত, পুরু, সেলুলোজ নির্মিত নির্জীব আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে তাকে কোষ প্রাচীর বলে।

কোষ প্রাচীর
কাজ-
উদ্ভিদ কোষের বাইরের আবরন হিসেবে কোষপ্রাচীর নিম্নোক্ত কাজ করে থাকে। যথা-
১। কোষকে নির্দিষ্ট আকার দান করে।
২। কোষীয় অংগাণুসমূহকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।
৩। পানি ও খনিজ লবণ শোষণ ও পরিবহনে সহায়তা করে।
৪। পার্শ্ববর্তী কোষের সাথে আন্তঃকোষীয় যোগাযোগ রক্ষা করে।
৫। এক কোষ থেকে অন্য কোষকে পৃথক করে।
৬|বহিঃ ও অন্তঃ উদ্দীপনার পরিবাহকরূপে প্লাসমোডেসমাটা কাজ করে।
উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের প্রধান অঙ্গাণু এবং তাদের কাজ:
উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদ ও প্রাণীর সকলেই প্রকৃতকোষী। প্রতিটি কতগুলো অঙ্গ নিয়ে তৈরি হয়।


প্রোটোপ্লাজম
কোষের ভেতরে যেসব অর্ধস্বচ্ছ থকথকে জেলিরজেলির মত বস্তু থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি বলা হয় ।কোষঝিল্লি দিয়ে ঘেরা সবকিছু প্রোটোপ্লাজম এমনকি করছিলেন নিজেও প্রোটোপ্লাজম এর একটি অংশ করছি এছাড়াও এখানে আরো আছে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু এবং নিউক্লিয়াস।
কাজ :
১।প্রোটোপ্লাজম বংশগতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে
কোষ ঝিল্লি : প্রোটোপ্লাজম এর বাইরে দুই স্তরের যে স্থিতিস্থাপক পর্দা থাকে তাকে কোষঝিল্লি বাপ প্লাজমালেমা বলে করছিলে আজকে মাইক্রোভিলাই ও বলে।

কাজ :
১।কোষের সব বস্তুকে ঘিরে রাখে ।
২। বাইরের প্রতিকূল অবস্থা হতে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে।
৩।পারস্পরিক বন্ধন বৃদ্ধি ও চলন ইত্যাদি কাজে এর ভূমিকা অনেক ।
৪।অভিস্রবণ এর মাধ্যমে পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
৫।একটি কোষের আকৃতি প্রদান করে।
৬।কোষের বাইরের ও ভেতরের বস্তুসমূহ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু :
প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা থেকে সরিয়ে দিলে যে জেলির মত বস্তুটি থেকে যায় তাকেই সাইটোপ্লাজম বলে এই সাইটোপ্লাজম এর মধ্যে অনেক ধরনের অঙ্গাণু রয়েছে এদের প্রত্যেকের কাজ আলাদা হলেও একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল এই অঙ্গাণু গুলো কোন কোনটির ঝিল্লি যুক্ত আবার কোন কোনটির ঝিল্লিবিহীন অঙ্গাণু বলা হচ্ছে।
ঝিল্লি যুক্ত সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু
মাইট্রোকন্ডিয়া
যেসব কোষীয় অঙ্গাণু কোষের শক্তি উৎপাদন করে তাকে মাইট্রোকন্ডিয়া বলা হয় অংশগ্রহণকারী অঙ্গাণুটি ১৮৯৮ সালে আবিষ্কার করেন মাইট্রোকন্ডিয়া দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণে আবৃত ভিতরের দিকে থাকে। ভিতরের স্তরটি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে এদের ক্রিস্টি বলে এর গায়ে বৃন্ত যুক্ত গোলাকার বস্তু থাকে এদের অক্সিজোম বলা অক্সিজোম উৎসেচক গুলো সাজানো থাকে। মাইট্রোকন্ডিয়া অন্তস্থলের ভিতরে যে তরল পদার্থ থাকে তাকে ম্যাট্রিক্স বলা হয়।

চিত্র-( ক) মাইট্রোকন্ডিয়া (খ) লম্বচ্ছেদ
কাজ :
১.এটি জীবের শাসনকার্যে সাহায্য করে ।
২.এর মাধ্যমে শ্বসনের ফলে খাদ্য মধ্যস্থ শক্তি নির্গত হওয়া বলে একে কোষের শক্তিঘর বা পাওয়ার হাউস বলা হয়।
৩. যাবতীয় কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করাই এর কাজ কোষের মাইট্রোকন্ডিয়া শোষণের জন্য প্রয়োজনে এন জাইম কো এনজাইম ধারণ করে থাকে।
৪. স্নেহ জাতীয় খাদ্য বিপাকে সাহায্য করে থাকে।
৫. ক্রেবস চক্র শহরের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলো মাইট্রোকন্ডিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে।
প্লাস্টিড :
উদ্ভিদ কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল প্লাস্টিড
কাজ
১।খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা ।
২।বিভিন্ন ধরনের কীট প্রতঙ্গ কে আকৃষ্ট করে , পরাগায়ণে সাহায্য করাই প্লাস্টিডের কাজ।
৩।ক্রোমোপ্লাস্ট সবুজ রঙের হয়ে থাকে।
প্লাস্টিক তিন ধরনের ক্লোরোপ্লাসট, ক্রোমোপ্লাস্, লিউকোপ্লাস্ট
ক্লোরোপ্লাস্ট :
সবুজ রংয়ের প্লাস্টিক যারা সাঙ্গ সালোকসংশ্লেষণে সরাসরি অংশ নেয় তাদের ক্লোরোপ্লাস্ট বলে ক্লোরোপ্লাস্টের সবুজ রঞ্জক ক্লোরোফিল এবং কমলা রঞ্জন ক্যারোটিন থাকে। এরা দেখতে চ্যাপ্টা ডিম্বাকার গোলাকার ফিতার মতো এবং কাপের মতো প্রভৃতি আকৃতির হয়। পাতা কচি কান্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদের পাওয়া যায় প্লাস্টিডের গ্রানা অংশ সূর্যলোকে আবদ্ধ করে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে থাকে। কোষের ভেতরকার পানি ব্যবহার করে সরল শর্করা তৈরি করা হয় এই প্লাস্টিডে ক্লোরোফিল থাকে তাই এদের সবুজ দেখায়।
১।ক্লোরোপ্লাস্ট এর অন্যতম কাজ হল সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি করা।
২।উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সঞ্চয় করেএরা সাহায্য করে ফুল পাতা ও ফল কে আকর্ষণীয় রঙে রাঙা নিত্য করে কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট করে।

চিত্র- একটি প্লাস্টিড কণা (খন্ডিত)। ক্লোরোপ্লাস্ট এর বিভিন্ন অংশ (ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং সরলভাবে উপস্থিত।)
ক্রোমোপ্লাস্টে:
অসবুজ রঙিন প্লাস্টিড যারা উদ্ভিদের নানা ধরনের কাজে সাহায্য করে তাদের ক্রোমোপ্লাস্ট বলে। এরা হলদে ও কমলা রঙের প্লাস্টিড। এতে কমলা রঙের ক্যারোটিন এবং হলুদ রংয়ের জ্যান্থোফিল রঞ্জক থাকে। এরা গোলাকার লম্বা তারকাকার প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়। এরা প্রোপ্লাস্টিড থেকে তৈরি হয়। এরা ফুল ফল মূল প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গে থেকে অঙ্গকে রঞ্জিত করে কিন্তু সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয় না।
লিউকোপ্লাস্টঃ
রঞ্জকবিহীন বর্ণহীন প্লাস্টিড যা উদ্ভিদের বিভিন্ন বিপাকে অংশ নেয় তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। এরা বর্ণহীন প্লাস্টিড। দেখতে দন্ডাকার বা গোলাকার। ভ্রুণকোশ এবং যেসব কোষে কোন প্রকার সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না সেইসব কোষে লিউকোপ্লাস্ট থাকে। এরা বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গের তরল খাদ্যকে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চিত খাদ্য বস্তুতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে—শ্বেতসার, তেল, প্রোটিন। এরা প্রোপ্লাস্টিড থেকে তৈরি হয়।এরা আলোকের উপস্থিতিতে ক্রোমোপ্লাস্ট ও ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। এই জাতীয় প্লাস্টিডে ল্যামেলিয় অংশ স্তরীভূত অবস্থায় থাকে না।
গলজি বস্তু :
কোষের সাইটোপ্লাজম বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যসম্পাদনকারী জটিল গঠন বিশিষ্ট অঙ্গাণুর নাম হল গলজি বস্তু। ১৮৯৮ পেঁচার স্নায়ু কোষ থেকে এগুলোর আবিষ্কার। প্রাণী কোষে প্রধানত এরা থাকে তবে বহু উদ্ভিদ কোষে ওয়েদার দেখা যায়।

চিত্র- গলজি বস্তু।
কাজ:
১. কোষের ভেতরের বিভিন্ন ক্ষরিত পদার্থ কোষের বাইরের নিক্ষেপ করা গলজি বস্তুর প্রধান কাজ।
২। এগুলোতে বিভিন্ন খাদ্যবস্তু জমা থাকে।
৩।এরা প্রোটিন অণুসমূহ বাছাই করে সঠিক স্থানে প্রেরণ করে।
৪। এরা মাইট্রোকন্ডিয়া কে ATP উৎপাদন উদ্বুদ্ধ করে ।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলা :
কোষের সাইটোপ্লাজমের এন্ডোপ্লাজম অংশের মধ্যে জালক আকারে বিস্তৃত একক পর্দা বিশিষ্ট অসম আকৃতির কোষীয় অঙ্গাণুকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (endoplasmic reticulum =ER ) এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে।গ্রানিয়ার ১৮৯৭ সালে প্রথম কোষে ER দেখেন। ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞানী পোর্টার, ক্লড, এবং ফুলাম একত্রে সর্বপ্রথমে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গঠন বর্ণনা করেন।পোর্টার ও কলম্যান এদের নামকরণ করেন ১৯৫২ সালে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা ER।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজগুলা হল-
১. ER সাইটোপ্লাজমের কাঠামো গঠন করে এবং যান্ত্রিক কাজে সাহায্য করে।
২. শারীরবৃত্তীয় কাজে বিস্তৃত পর্দা যোগায়।
৩. ER, কোষকে অনেক অসম্পূর্ণ কক্ষে ভাগ করে ফলে নানা প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে আলাদা রাখে।
৪. এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা কোষের ভিতরে উৎসেচকগুলির সমবন্টনে সাহায্য করে।
৫. এরা বিপাকীয় কাজে তৈরি বস্তুগুলোকে সক্রিয় ও আলাদা রাখতে সাহায্য করে।
৬. ER কোষীয় স্পন্দনকে পেশী ও স্নায়ুর মতো বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করে।
৭. এরা কোষগহ্বর ও অন্যান্য অঙ্গাণু গঠনে সাহায্য করে।
কোষ গহবরঃ
সাইটোপ্লাজমে একক পর্দা বেষ্টিত তরলে পূর্ণ গহবরকে কোষ গহবর বলে। কোষ গহবরে পানি, জৈব এসিড, শর্করা, খনিজ লবণ ইত্যাদি জমা থাকে। উদ্ভিদের কোষ গহবর বেশ বড় এবং কোষের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে অবস্থান করে। প্রাণী কোষের কোষ গহবর আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র কিন্তু সংখ্যায় বেশি। এটি কোষের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
লাইসোজোম :
একক পর্দাবৃত পাচক উৎসেচক যুক্ত অতি সূক্ষ্ম থলিবৎ কোষীয় উপাংশ (অঙ্গাণু) যা কোষীয় বস্তুর পাচনে এবং বীজাণু ধ্বংসে অংশগ্রহণ করে তাদের লাইসোজোম বলে।এরা সাধারণত গোলাকার হয় এবং দেশে 0.2 um থেকে 0.8 um হয়। লাইসোজোম বিভিন্ন কোষে বিভিন্ন সংখ্যায় বর্তমান থাকে।

চিত্র- লাইসোজোমের কণা ।
লাইসোজোমের কাজ :
১।লাইসোজোম পরিপাকে অংশগ্রহণ করে।
২।পরিস্ফুটন কালে কোষীয় উপাংশ ধ্বংস করা।
৩।কোষের বিভিন্ন অংশের ধ্বংস; একে অটোলাইসিস বলে।
৪।মৃত কোষ বা পুরোনো লোহিত কণিকা কোষের ধ্বংস করা।
৫।সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করা।
৬।তঞ্চিত রক্ত ধ্বংস করা।
৭।ক্যারোটিন তৈরি করা।
৮।ভ্রূণ বৃদ্ধির সময় খাদ্য সরবরাহ করা।
ঝিল্লি বিহীন সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু
কোষকঙ্কাল(Cytoskeleton):
কোষের ভেতরে সাইটপ্লাজমে অবস্থিত তন্তুসমূহের সমষ্টি, যা কোষের আকৃতি রক্ষা, বিভিন্ন অঙ্গাণুর সমন্বয় সাধন, চলন, ইত্যাদি কাজের দায়িত্ব পালন করে। কোষঝিল্লি অতিক্রম কিরে কোষের ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই কোষকঙ্কাল নজরে পড়বে। কোষকঙ্কাল ভিতর থেকে কোষটাকে ধরে রাখে।কোষ কঙ্কাল ভেতর থেকে কোষ তাকে আটকে ধরে রাখে। এগুলা মায়োসিন টিউবিউলিন ইত্যাদি প্রোটিন দিয়ে এর বিভিন্ন ধরনের তন্ত্র নির্মিত হয়। যেমন মাইক্রোটিউবিউল মাইক্রোফিলামেন্ট এ ধরনের তন্তু।
রাইবোজোম:
কোষের সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস এবং এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার অতিক্ষুদ্র গোলাকার, রাইবো প্রোটিন নির্মিত, পর্দাবিহীন, প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহণকারী যে অঙ্গাণু পাওয়া যায়, তাদের রাইবোজোম বলে। এদের সংখ্যা কোষে রাইবোজোমের কাজ
প্রোটিন ধ্বংসকারী উৎসেচকের হাত থেকে সদ্যোজাত প্রোটিন শৃংখলকে রক্ষা করে
কাজ –
১।প্রোটিন সংশ্লেষে করা।
২।ফ্যাটের বিপাক সাধন করা।র বিপাকীয় কাজের উপর নির্ভর করে বাড়ে এবং কমে।
সেন্ট্রোজোমঃ
সকল প্রাণী কোষ এবং কিছু উদ্ভিদ কোষের সাইটোপ্লাজম তরলের মধ্যে নিউক্লিয়াসের পাশে অবস্থিত পর্দাবিহীন তারকা আকৃতির কোষীয় অঙ্গাণুকে সেন্ট্রোজোম বলে। ইন্টারফেজ কোষের কেন্দ্রস্থলে নিউক্লিয়াসের পাশে সেন্ট্রোজোম অবস্থিত। এরা প্রাণী কোষের বৈশিষ্ট্য প্রধানত প্রাণী কোষে এদের পাওয়া যায়। নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ কোষে এদের দেখা যায়। প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াস এর কাছে দুটি পাতা দেখা যায় তাদেরকে সেন্ট্রিওল বলা হয়। সেন্ট্রিওল এর চারপাশে অবস্থিত কারো তরলকে সেন্ট্রোজোম বলা হয়ে থাকে এবং সেন্ট্রোজোম সহজে সেন্ট্রোজোম বলে। বিভিন্ন ধরন ফ্লাজেলা সৃষ্টিতে এরা অংশগ্রহণ করে থাকে।

সেন্ট্রোজোমের কাজ –
১. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের সময় দ্বিত্ব সেন্ট্রোজোম থেকে মাইক্রোটিউবিউল উৎপন্ন হয় মাইটোটিক স্পিন্ডেল গঠন করে। এই স্পিন্ডলের সাহায্যে বিভাজিত ক্রোমোজোমগুলি কোষের মেরুতে গমন করে।
২. সেন্ট্রোজোম মাইক্রোটিউবিউল গুলির সৃষ্টির সূচনা স্থান হিসেবে কাজ করে।
৩. মাইক্রোটিউবিউল গুলি টিউবিউলিন নামক প্রোটিন এর সাহায্যে প্রলম্বিত হলেও সেন্ট্রোজোম মাইক্রোটিউবিউল গঠিত হতে পারে না।
৪. সেন্ট্রোজোমের অন্তর্গত সেন্ত্রিওল শুক্রাণুর পশ্চাৎ গঠনে সাহায্য করে।
৫. মাকুযন্ত্র সৃষ্টি করে।
৬. ফ্লাজেলা ও সিলিয়া গঠন করে ।
নিউক্লিয়াস :
জীব কোষের প্রোটোপ্লাজম এর নির্দিষ্ট পর্দাঘেরা ক্রোমোজোম বহনকারী সুস্পষ্ট যে বস্তুটি দেখা যায় তাকেই নিউক্লিয়াস বলা হয় এরা গোলাকার ডিম্বাকার অনল আকার আকৃতির হয়ে থাকে এবং লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না নিউক্লিয়াস বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত থাকে। ১৮৩১সালের রবার্ট ব্রাউন সর্বপ্রথম অর্কিড পাতার কোষে নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করে এবং এর নামকরণ করেন।
নিউক্লিয়াসের কাজ –
১। নিউক্লিক এসিডের ভান্ডার হিসেবে কাজ করা।
২। রাইবোজোম সৃষ্টি করে ,প্রোটিন ও আর এন এ সংশ্লেষণ করে কোষের সব ধরনের জৈবিক নিয়ন্ত্রণ করে ৩।বংশগতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ ধারণ ও বহন করে
৪।নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন অংশ সমূহ ধারণ করা নিউক্লিয়াসের, বিভাজন এর সময় ব্যবহারযোগ্য খাদ্য সঞ্চয় করা।

একটি সুগঠিত নিউক্লিয়াস মোট চারটি অংশ নিয়ে গঠিত যথা –
১.নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ২.নিউক্লিওপ্লাজম ৩.নিউক্লিওলাস
৪. নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম
১.নিউক্লিয়ার ঝিল্লি : নিউক্লিয়াসকে ঘিরে যে দিয়ে স্তরে আবরণ রয়েছে তাকে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বলা হয় নিউক্লিয়ার সর্বত্রই বিশেষ ধরনের অসংখ্য ছিদ্র থাকে এদেরকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলে নিউক্লিয়ার লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয় বস্তুসমূহ কে পৃথক করে সংরক্ষন করা নিউক্লিয়ার মাধ্যমে নিউক্লিওপ্লাজম ও সাইটোপ্লাজম এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর সাথে যুক্ত হয়ে নিউক্লিয়াসের অবস্থানকে মজবুত করা।
২।নিউক্লিওপ্লাজম :
নিউক্লিওপ্লাজম নিউক্লিয়ার জেলে দ্বারা আবৃত স্বচ্ছ ঘন ও দানাদার তরল পদার্থকে নিউক্লিওপ্লাজম বলা হয় নিউক্লিওলাস ও ক্রোমাটিন জালিকা এতে অবস্থান করে কাজ নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে নির্ধারণ করে নিউক্লিয়াস বিভাজন এর সময় ব্যবহারযোগ্য খাদ্য সঞ্চিত করে।
৩।নিউক্লিওলাস :
নিউক্লিওলাস নিউক্লিয়াসের যে ছোট অধিকতর ঘন গোলাকার বস্তু দেখা যায় তাকে নিউক্লিওলাস বলা হয় প্রতিটি নিউক্লিয়াসের সাধারণত একটি নিউক্লিওলাস থাকে সাধারণত তন্তুময় দানাদার ও ম্যাট্রিক্সে তিন অংশে ভাগ করা যায়। নিউক্লিওলাস এর কাজ বিভিন্ন প্রকার আর এন এ সংশ্লেষণ করে প্রোটিন সংশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করে ক্রোমোজোমাল চলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে নিউক্লিক এসিডের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে থাকে.
৪।নিউক্লিয়ার রেটিকুলা :
নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে নিউক্লিওপ্লাজম এর যে সূত্রাকার তন্ত্র জালিকা আকারে ছড়ানো থাকে তাকে ক্রোমাটিন জালিকা বলে ক্রোমাটিন তন্তু ক্রমাগত কুণ্ডলিত অপেক্ষাকৃত খাটো ও মোটা হয় তখন তাকে ক্রোমোজোম ক্রোমোজোম এক বা একাধিক সেন্ট্রোমিয়ার দুটি ক্রোমাটিড স্যাটেলাইট থাকে বংশগতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে আর এন এ এর মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করে মিউটেশন প্রকরণ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিউক্লিয়াসের কাজ এক নিউক্লিক এসিডের ভান্ডার হিসেবে কাজ করা রাইবোজোম সৃষ্টি করে প্রোটিন ও আর এন এ সংশ্লেষণ করে কোষের সব ধরনের জৈবিক নিয়ন্ত্রণ করে বংশগতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ ধারণ ও বহন করে নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন অংশ সমূহ ধারণ করা নিউক্লিয়াসের বিভাজন এর সময় ব্যবহারযোগ্য খাদ্য সঞ্চয় করা।
ক্রোমাটিন জালিকাঃ

চিত্র- ক্রোমোজোম
নিউক্লিওপ্লাজম এ অবস্থিত এবং ক্ষারীয় রঞ্জক রঞ্জিত নিউক্লিওপ্রোটিন সূর্যালোকে ক্রোমাটিন জালিকা বলা হয়ে থাকে ।এদেরকে কেবলমাত্র কোষ বিভাজনের কোন দশায় দেখা যায়। বিভাজনের সময় ক্রোমাটিন জালিকা খুলে কতগুলো নির্দিষ্টসংখ্যক সুতার মতো অংশের পরিণত হয়। এদের ক্রোমোজোম বলা হয় ক্রোমোজোম ক্রোমাটিড নামের জৈব বস্তুর দিয়ে তৈরি করা হয়। নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম এরা বিভাজনের সময় মোটা ও খাটো হয় তাই তখন তাদের আলাদা আলাদা ক্রোমোজোম হিসেবে দেখা যায় ক্রোমোজোম এ অবস্থিত জিন গুলো বংশগতির গুণাবলী বহন করে এক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নিয়ে যায়
কাজ –
১।ক্রোমোজোম এর বংশধারা বহনকারী জিন অবস্থান করে এবং এর বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় বহন করা হলো এর কাজ।
নিউরন :
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একককে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি। এই একটি মাত্র মানব মগজে রয়েছে ১,০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল, আর এগুলো একটি আরেকটির সাথে যুক্ত হয়ে শত শত কোটি স্নায়ুতন্তু হয় ।
নিউরনের কাজ
১। নিউরনের প্রধান কাজ হল উদ্দীপনা বহন করা ।
২। নিউরন স্মৃতি সংরক্ষণে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩।সংবেদী নিউরন গ্রাহক অঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ক থেকে কার্যকরী উদ্দীপনা প্রদান করে থাকে।
ফ্লোয়েম (Phloem):
উদ্ভিদ কাণ্ডের এরা জাইলেমের সাথে একত্রে পরিবহন টিস্যু তৈরি করে থাকে।
যে টিস্যু মাধ্যমে উদ্ভিদের পাতায় তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়ে থাকে তাকে ফ্লোয়েম টিস্যু বলে। সিভকোষ, সঙ্গীকোষ ফ্লোয়েম ফাইবার এবং ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এই চার প্রকার কোষ নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত হয়ে থাকে।

চিত্র- ফ্লোয়েম টিস্যু
ফ্লোয়েম টিস্যুর কাজ –
১.পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করা।
২. এরা খাদ্য সঞ্চয় করে এবং খাদ্য পরিবহনে সহায়তা করে থাকে।
৩. ফ্লোয়েম টিস্যু মাধ্যমে উৎপাদিত শর্করা ও মৌলের সঞ্চিত খাদ্য একইসাথে উপরে-নিচে পরিবাহিত হয়ে থাকে।
নিচে সিভকোষ, সঙ্গীকোষ ফ্লোয়েম ফাইবার এবং ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এই চার প্রকার কোষ নিয়ে আলোচনা করা হল-
ক) সিভকোষ :
এরা বিশেষ ধরনের কোষ। দীর্ঘ, পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত ও জীবিত এ কোষগুলো লম্বালম্বি ভাবে একটির উপর একটি পরপর সজ্জিত হয়ে সিভনল গঠন করে। এ কোষ গুলো চালুনির মতো ছিদ্রযুক্ত সিভিপ্লেট দ্বারা পরস্পর থেকে আলাদা থাকে। সিভকোষে প্রোটোপলাজম প্রাচীর ঘেঁষে থাকে। ফলে একটি কেন্দ্রীয় ফাঁপা জায়গার সৃষ্টি হয়, যা খাদ্য পরিবহনে নল হিসেবে কাজ করে। এদের প্রাচীর লিগনিন যুক্ত। পরিণত সিভকোযে কোনো কেন্দ্রিকা থাকেনা।
অবস্থান: সকল প্রকার গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে সিভকোষ ও সিভনল উপস্থিত থাকে।
কাজ: পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন লম্বচ্ছেদ অংশে পরিবহন করা এদের প্রধান কাজ।
খ) সঙ্গীকোষ :
প্রতিটি সিভকোষের সাথে প্যারেনকাইমা জাতীয় একটি করে কোষ অবস্থান করে। এদের কেন্দ্রিকা বেশ বড়। ধারণা করা হয় যে, এই কেন্দ্রিকা সিভকোষের কার্যাবলি কিছু পরিমাণে হলেও নিয়ন্ত্রণ করে। এ কোষ প্রোটোপলাজমপূর্ণ ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত। ফার্ন ও ব্যক্তিবীজী উদ্ভিদে এদের উপস্থিতি নেই।
গ) ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা : ফ্লোয়েমে উপস্থিত প্যারেকাইমা কোষগুলোই ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা।
গঠন: এদের কোষ সাধারণ প্যারেনকাইমার মতো পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত এবং প্রোটোপ্লাজমযুক্ত।
অবস্থান: একবীজপত্রী উদ্ভিদ ব্যতীত দ্বিবীজপত্রী, আবৃতবীজী ও নগ্নবীজী এবং ফার্ন উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে এদের পাওয়া যায়।
কাজ: এরা খাদ্য সঞ্চয় করে ও খাদ্য পরিবহনে সহায়তা করে।
ঘ) ফ্লোয়েম ফাইবার বা তন্তু :
স্কেরেনকাইমা কোষ সমন্বয়ে ফ্লোয়েম ফাইবার গঠিত হয়। এগুলো এক প্রকার দীর্ঘ কোষ যাদের প্রান্তদেশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এদের বাস্টফাইবারও বলে। পাটের আঁশ এক ধরনের বাস্টফাইবার। উদ্ভিদ অঙ্গের গৌণ বৃদ্ধির সময় এ ফাইবার উৎপন্ন হয়। এসব কোষের প্রাচীরে কূপ দেখা যায়।
পেশি টিস্যু(Muscular Tissue) :
ভ্রূণের মেসোডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে।
পেশি টিস্যুর বৈশিষ্ট্যঃ
১। এক এরা সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যু ।
২।এদের মাতৃকা অনুপস্থিত।
৩। পেশীগুলো সরু লম্বা ও তন্তুময়।
৪।পেশী সংকোচন প্রসারণ এর মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন ও অভ্যন্তরীণ পরিবহনের সাহায্য করে।
অবস্থান গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে পেশী টিস্যু তিন ধরনের ঐচ্ছিক পেশি, ও অনৈচ্ছিক পেশী,এবং হৃদপেশি।

চিত্র- বিভিন্ন ধরণের টিস্যু
ঐচ্ছিক পেশি(Voluntary muscle):
১।প্রাণির ইচ্ছা অনুযায়ী সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে থাকে।
২.এই পেশী টিস্যু কোষগুলো নলাকার শাখাবিহীন হয়ে থাকে।
৩.এদের সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে।১।
৪. এই পেশি দ্রুত সংকোচিত এবং প্রসারিত হতে পারে।
৫.এপেশি অস্থি তন্ত্রের সঙ্গে থাকে। যেমন মানুষের হাত এবং পায়ের পেশি।
অনৈচ্ছিক পেশি (Involuntary muscle):
১. এই পেশি টিস্যু সংকোচন-প্রসারণ প্রাণের ইচ্ছাধীন নয়।
২. এই পেশীগুলোর কোষগুলো মাকু আকৃতি।
৩. এই পেশীগুলোর গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না এজন্য এ পেশীকে মসৃণ পেশী বলে।
৪. মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তনালী পৌষ্টিক নালী ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে।
৫. এপিসি প্রধানত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সঞ্চালন অংশ নেয় যেমন খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় অন্ত্রের ক্রমসংকোচন।
হৃদপেশী বা কার্ডিয়াক পেশি(Cardiac muscle):
১. হৃদপেশী মেরুদন্ডী প্রাণীদের হৃদপিন্ডের এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি।
২. এই টিস্যুর কোষগুলো নলাকৃতি শাখান্বিত আড়াআড়ি দাগযুক্ত।
৩. কার্ডিয়াক পেশির গঠন ঐচ্ছিক পেশির মতো হলেও কাজ অনৈচ্ছিক পেশির মত।
৪. কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলোর শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে।
৫.হৃদপিন্ডের পেশী সমন্বিতভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়।
৬.মানব ভ্রূণ সৃষ্টির একটা বিশেষ পর্যায় থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হৃদপিন্ডের কার্ডিয়াক পাশে একটা নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া সচল রাখে।
নিউরন :
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একককে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি। এই একটি মাত্র মানব মগজে রয়েছে ১,০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল, আর এগুলো একটি আরেকটির সাথে যুক্ত হয়ে শত শত কোটি স্নায়ুতন্তু হয় ।
নিউরনের কাজ
১। নিউরনের প্রধান কাজ হল উদ্দীপনা বহন করা ।
২। নিউরন স্মৃতি সংরক্ষণে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩।সংবেদী নিউরন গ্রাহক অঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ক থেকে কার্যকরী উদ্দীপনা প্রদান করে থাকে।
নিউরনের গঠন :

চিত্র- একটি নিউরন।
কোষদেহ
এটি নিউরনের মুখ্য অংশ । এটি গোলাকার, ডিম্বাকার, মোচাকার, সুচালো প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এদের ব্যাস ৬ মাইক্রন থেকে ১২০ মাইক্রন পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোষদেহ কোষপর্দা, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত হয়। কোষে সেন্ট্রিওল থাকে না। এজন্য নিউরোনের কোষ বিভাজনও হয় না।
প্রলম্বিত অংশ
কোষদেহ থেকে নির্গত বা বহির্গত শাখা-প্রশাখাকে প্রলম্বিত অংশ বলা। এটি দু’ধরনের যথা : ক. ডেনড্রাইট (Dendrite) ও খ. অ্যাক্সন (Axon)।
ডেনড্রাইট
কোষদেহের চারদিকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র তন্তুময় শাখাবিশিষ্ট অংশকে ডেনড্রাইট বলে। একটি নিউরনে বহু ডেনড্রাইট থাকে।ডেনড্রাইটগুলোই আসলে মূলত সেই অংশ যা মানব দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে অন্য নিউরণ থেকে তথ্য গ্রহণ করে থাকে । ডেনড্রাইটের সংখ্যা যত বেশি হবে, একটি নিউরণের তথ্য গ্রহণের ক্ষমতাও তত বেশি হবে। একটি নিউরণের ডেন্ড্রাইটের সংখ্যা ৪,০০,০০০ পর্যন্তও হতে পারে।
অ্যাক্সন
কোষদেহ থেকে উৎপন্ন বেশ লম্বা ও শাখাবিহীন তন্তুটির নাম অ্যাক্সন। অ্যাক্সনের চারদিকে চ্যাপ্টা কোষ নির্মিত পাতলা আবরণকে নিউরিলেমা বলে। নিউরিলেমা পরিবেষ্টিত অ্যাক্সনকে স্নায়ুতন্তু বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিউরিলেমা ও অ্যাক্সনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহপদার্থের একটি স্তর থাকে। এ স্তরটিকে মায়েলিন (Myelin) আবরণ বলে। নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অ্যাক্সনে কিছু সংকুচিত অঞ্চল দেখতে পাওয়া যজায়অ্যাক্সনের মূল অক্ষের আবরণীকে এক্সোলেমা বলে। অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত বিভক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে টেলোডেনড্রিয়া বলে। পরপর দুটো নিউরনের প্রথমটার অ্যাক্সন এবং পরেরটার ডেনড্রাইটের মধ্যে একটি স্নায়ুসন্ধি গঠিত হয়, একে সিন্যাপস বলে। অ্যাক্সন লম্বায় এক মিটারের বেশি হতে পারে। বহুসংখ্যক নিউরণ মিলিত হয়ে একটি স্নায়ু (Nerve) গঠিত হয়ে থাকে ।
লিখেছেন,
আফিয়া জাহিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়