প্রথম বিশ্বযুদ্ধ- প্রথম পর্ব
প্রথম বিশযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়া এক বিভীষিকার নাম। মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল ছিল ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী। মূলত ইউরোপীয় বিবাদ-বিসংবাদকে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধ সংঘটিত হলেও সমগ্র বিশ্বই এর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছিল। এর ফলে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতি ও রাষ্ট্র্রের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে বলা হয় সভ্যযুগের সর্বপ্রথম অসভ্য যুদ্ধ। ১৯১৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে এই ধ্বংসলীলা চলে ১৯১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে, আন্দাজ করা হয় ১,৫০০ দিন ধরে প্রতিদিন ৬,০০০ মানুষ নিহত হয়। কমপক্ষে ৭৪ মিলিয়ন সৈন্য এই যুদ্ধে অংশ নেয়। মিত্রশক্তির ১৮ মিলিয়ন সৈন্য এই যুদ্ধে প্রাণ হারায়। কেন্দ্রীয় শক্তির মারা যায় প্রায় ১২ মিলিয়ন সৈন্য।
১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্কডিউক ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ এবং উনার স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অস্ট্রিয়া। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের শুরু হলেও যুদ্ধের পটভূমি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। শুরুটা হয় অস্ট্রো-হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার মধ্যে এবং কিছু দিনের মধ্যেই পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এই আগুন আটলান্টিক পার হয়ে মার্কিনমুলুকে যাত্রা করে এবং এশিয়ার কিছু দেশও এই ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে। আর এই কারনেই এটাকে বলা হয় মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ। এবং প্রথম বারের মতো বিশ্বযুদ্ধ বা মহাযুদ্ধ হয়, তাই এটাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বলা হয়। দুই ব্লকে বিভক্ত পরাশক্তিদের মাঝে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। এটা শুধু আস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দের এবং তার স্ত্রীর হত্যার জন্য শুরু হয়না, বরং এটা ছিলো একটি স্ফুলিঙ্গ মাত্র। যা আগে থেকে জ্বলতে অপেক্ষায় থাকা তেলে আগুন দেয়।
এই মহাযুদ্ধের করালগ্রাসে বদলে যায় ইউরোপের নকশা, বদলে যায় পৃথিবীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস। কীভাবে এই তাণ্ডবলীলা শুরু হয়েছিল, তা একবার পেছন ফিরে দেখা যাক।
আমরা পরের পর্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পিছনের ইতিহাস সম্পর্কে জানবো।
লিখেছেন,
আফসানা আক্তার