মঙ্গলকাব্য
মঙ্গলকাব্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন। এটি এক শ্রেণীর ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্যের উদাহরন। এ কাব্যে দেবতার আরাধনা, মাহাত্ম্য কীর্তন করা হয়, এ কাব্য শ্রবনে মঙ্গল হয় ও বিপরীতে হয় অমঙ্গল।
মঙ্গলকাব্য রচনার মূল কারন স্বপ্নে দেবী কর্তৃক আদেশ লাভ।
এ কাব্য লৌকিক দেবতাদের নিয়ে রচিত। ‘মনসা ও চন্ডী’ এই দুই দেবতার প্রাধান্য বেশি।
মঙ্গলকাব্যে মোটামুটি ৫টি অংশ থাকে।
উল্লেখযোগ্য মঙ্গলকাব্য হলোঃ মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল।
মঙ্গলকাব্য শ্রেনীগত দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করাঃ
- পৌরাণিক শ্রেনী (অন্নদামঙ্গল, চন্ডিকামঙ্গল)
- লৌকিক শ্রেনী ( মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল, শিবমঙ্গল,কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর)।
মনসামঙ্গলঃ
মনসাঃ সাপের অধিষ্ঠাত্রী দেবি মনসা যার অপর নাম ‘কেতকা ও পদ্মাবতী’। লৌকিক ভয়ভীতি থেকে এ দেবীর উদ্ভব।
মনসামঙ্গল কোথাও ‘পদ্মাপুরাণ’ নামেও অভিহিত হয়েছে।
মনসামঙ্গলের কাহিনীঃ পূজা দিতে অস্বীকার করায় মনসা দেবী বনিক চাঁদ সদাগরকে ধনহারা ও তার পুত্র লক্ষ্মীন্দরকে সর্পদংশনে হত্যা করে। বেহুলা লক্ষ্মীনদরের নব বধূ।
উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ
- এ কাব্যের প্রধান চরিত্রঃ মনসা দেবী, চাঁদ সদাগর, লক্ষ্মীন্দর, বেহুলা। এর মধ্যে চাঁদ সদাগর দেবতা বিরোধী চরিত্র।
- আদিকবিঃ কানা হরিদত্ত
- শ্রেষ্ঠকবিঃ বিজয়গুপ্ত।
- অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কবিঃ বিপ্রদাস পিপিলাই, নারায়ণ দেব,দ্বিজ বংশীদাস, কেতকাদাস,ক্ষেমানন্দ।
- ‘মনসা বিজয়’ বিপ্রদাস পিপিলাই এর উল্লেখযোগ্য কাব্য।
চন্ডীমঙ্গলঃ
চন্ডী দেবীর কাহিনী অবলম্বনে রচিত।
উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ
- মঙ্গলকাব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
- প্রধান চরিত্রঃ কালকেতু, ফুল্লরা, ধনপতি সদাগর, ভাড়ুদত্ত (খল চরিত্র)।
- আদিকবিঃ মানিক দত্ত।
- শ্রেষ্ঠ কবিঃ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তার উপাধি কবিকঙ্কন।
অন্নদামঙ্গলঃ
চন্ডী ও অন্নদা অভিন্ন একই দেবীর দুই নাম।
উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ
- এর প্রধান কবিঃ ভারতচন্দ্র।
- ৩ টি খন্ডে রচিত।
ভারতচন্দ্র সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ
- উপাধিঃ রায়গুনাকর। এ উপাধি দেয় কৃষ্ণ নগর রাজ সভার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র।
- জন্মঃ ১৭১২ সালে ভুরসুট পরগনার পেড়ো বা আধুনিক হাওড়া জেলার পান্ডুয়া গ্রামে।
- বিখ্যাত গ্রন্থঃ মানসিংহ ভবানন্দ উপাখ্যান।
অন্নদামঙ্গল কাব্যের অমর উক্তিঃ
- আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।– ঈশ্বরী পাটনী এ প্রার্থনা করেছেন।
- বড়র পিরীতি বালির বাঁধ! ক্ষনে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ।
- মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন।
- নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়।
- অভাগা যোদ্যপি চায়, সাগর শুকায় যায়।
লিখেছেন,
সাবিকুন নাহার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
অনেক কিছু নতুন জানলাম।