পটভূমি:
ইউরোপের ইতিহাসে দেখা যায়, প্রতিটি বড় যুদ্ধের পর তাদের শান্তি নষ্ট না হয় তার জন্য তারা সাংগঠনিক উদ্যেগ গ্রহণ করে। নেপোলিয়নি যুদ্ধের পর ১৮১৫ সালের ভিয়ানা সম্মেলনের মাধ্যমে এরূপ একটি সমবায় শক্তি গঠন কারা হয়েছিল যাতে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে শান্তি বিরাজ করে।
১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতা, মানব বিপর্যয় ও সম্পদহানি পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এ যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে মানবসভ্যতার আস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের ১৪ দফা শান্তি প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা হয়। ১৪ নং দফায় বলা হয় যে, সব জাতির প্রতি ন্যায়বিচার এবং সব জাতির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়তে হবে। প্যারিস সম্মেলনে উড্রো উইলসনকে সভাপতি হিসাবে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নিয়ে লীগ অব নেশনের যাত্রা শুরু হয়।
উদ্দেশ্য:
লীগ অব নেশনস গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। উইলসনের ১৪ দফায় সব জাতির প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। ১০-১৬ ধারায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও সম্প্রতি রক্ষা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ভূখণ্ডগত অখন্ডতা রক্ষা করবে। লীগের অন্তভূক্ত কোন রাষ্ট্রকে বাহিরের কোন শক্তি আক্রমণ করলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করে লীগের অন্তভূক্ত রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিবে।
গঠনঃ
লীগ অব নেশনস এর দুটি শক্তিশালী অঙ্গ ছিল। একটি কাউন্সিল এবং সাধারণ পরিষদ। বিশ্বের শক্তিধর ৫ টি রাষ্ট্র যেমন ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি ও জাপান এই কাউন্সিলের সদস্য। এছাড়া ৪ টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র রাখা হয়।
সাধারণ পরিষদে যেকোন রাষ্ট্র অংশ নিতে পারতো। লীগের মহাসচিব লীগের সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করতেন। সভায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যর সম্মতিতে নতুন সদস্য গ্রহণ করতো।
এলান্ড দ্বীপপুঞ্জ সংক্রান্ত বিরোধ, সাইলেশিয়া সংকট সমাধান, তুরস্ক ও ইরাকের মধ্যকার সীমানা বিরোধ, করফু সংকট, গ্রিস-বুলগেরিয়া বিরোধ, পোল্যান্ড -লিথুয়ানিয়া সংকট সমাধান করেন। লীগের ২৩ নং ধারা অনুযায়ী ১৯২৩ সালে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা গঠিত হলে প্রাচ্যদেশে কলেরা, প্লেগ ও ম্যালেরিয়া দমনে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করেতে সমর্থ হয়।
১৯৩১ সালের পর বৃহত শক্তিগুলোর নিজেদের স্বার্থে লীগের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। জাপান ১৯৩১ সালে চীন আক্রমণ করে মানচুরিয়া দখল করে নেয়, ১৯৩৫ সালে ইতালি আবিসিনিয় সীমান্তে ‘ওয়াল ওয়াল’ গ্রামে গুলিবর্ষণ করে। জাপান, ইতালি লীগের স্থায়ী সদস্য হবার ফলে তাদের বিরুদ্ধে লীগ কোন সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়।
লীগ অব নেশন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা কাটিয়ে উঠতে এবং রাষ্ট্রগুলোকে ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় লীগ অব নেশন প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে। স্থায়ী, কার্যকর কাঠামো এবং শান্তি বিনষ্টকারী দেশকে শাস্তির কার্যকর কোন ব্যবস্থা কিংবা অস্থায়ী সেনা বাহিনী না থাকায় লীগ অব নেশন অকার্যকর হয়ে পড়ে; বিশেষ করে শক্তিশালী সোভিয়েত, আমেরিকা, ব্রিটেনের অতি প্রভাবে। যার ফলাফল বা ব্যর্থতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে চোখে পড়ে।
তথ্যবহুল ❤️