“বাঁচার জন্য বাঁচাতে হবে পৃথিবী”- এই অভীষ্টকে সামনে রেখে কাজ করে চলেছে Earth Care Initiative (ECI).
Earth Care Initiative (ECI) মূলত একটি পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন। তবে এর পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজ, ব্যবহার ইত্যাদিতে কিছু সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা যায়, পরিবেশকে দূষণ, দূর্যোগ ও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করে চলেছে Earth Care Initiative (ECI).
মে মাসের Earth Care Initiative (ECI) এর উদ্যোগে Earth Olympiad নামে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বিভিন্ন স্তরের মানুষ পৃথিবীকে নিয়ে কিভাবে চিন্তা করে, পৃথিবীর জন্য কি করছে, পরিবেশ রক্ষার্থে তাঁদের কি অবদান ইত্যাদি “পৃথিবীর জন্য গল্প ” আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গত ২৮ মে, ২০২১ “Knowing vs Acting – Environment শিরোনামে একটি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে Earth Care Initiative (ECI)।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ফেলো শামসুদ্দিন শিশির স্যার, বাংলাদেশ হেলথওয়াচ-ফিল্ড অপারেশনের কো-অর্ডিনেটর জনাব শশাঙ্ক বরণ রায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাশুরা শাম্মী ম্যাম এবং সহযোগী অধ্যাপক সাজেদুর রহমান স্যার।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন Earth Care Initiative (ECI) এর কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া মালিহা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন Earth Care Initiative (ECI) এর সদস্য রাফিউ আহমেদ। তিনি বিভিন্ন গঠনমূলক প্রশ্নোত্তর পর্ব ও আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে পরিচালনা করেন।
পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন আলোচকবৃন্দরা। তবে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিলো পরিবেশ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য প্রদান করেন শামসুদ্দিন শিশির স্যার। তিনি তাঁর বক্তব্যে Earth Olympiad নিয়েই বিশেষ আলোচনা করেন। এই প্রতিযোগিতা নিয়ে তিনি তাঁর ভালোলাগার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি জানান বর্তমান প্রজন্মের পৃথিবী ও পরিবেশকে নিয়ে চিন্তাচেতনা, লেখনীর মাধ্যমে অন্যকে অনুপ্রাণিত করার ধরণ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সচেতনতা বর্তমানে সৃষ্টি হচ্ছে তা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। সেই সাথে তিনি Earth Olympiad এর আয়োজক, অংশগ্রহণকারী থেকে শুরু করে যারা এই প্রতিযোগিতার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন সকলকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, উক্ত প্রতিযোগিতায় শিশির স্যার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তী আলাপচারিতায় জনাব শশাঙ্ক বরণ রায়’এর বক্তব্যে উঠে আসে পরিবেশ বনাম উন্নয়ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা। সভ্যতার চরম শিখরে উঠতে গিয়ে উন্নয়নের নামে আমরা যেভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করছি তা আসলে কতটুকু উন্নয়ন আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে আসবে এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়!
তিনি বিভিন্ন তথ্যবহুল আলোচনার মাধম্যে অনুষ্ঠানটিকে আরো ফলপ্রসূ করে তোলেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশগত বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনা করেন মাশুরা শাম্মী ম্যাম। তিনি পরিবেশ বিষয়ক সংবাদগুলোতে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করে, দায়িত্বের সাথে তা তত্ত্বাবধানের জন্য পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক এবং গবেষকদের আহ্বান জানান। পরিবেশের প্রতি সচেতন হওয়া মানেই শুধু বৃক্ষরোপণ নয় বরং বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের (যেমন- মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি) প্রতিও সচেতন হওয়া প্রয়োজন এ বিষয়ে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর মতো যথেষ্ট উপাদান প্রকৃতিতে থাকার পরও উন্নয়নের লোভে আমরা যেভাবে প্রকৃতিকে দিনদিন পঙ্গু করে দিচ্ছি সেই উন্নয়নের লোভ থেকে বেরিয়ে পরিবেশের উন্নয়ন, পৃথিবীর উন্নয়নে কি আমরা এগিয়ে আসতে পারবো? এমন প্রশ্নই বক্তব্য শেষে রেখে যান জনাব সাজেদুর রহমান স্যার।
সর্বোপরি তথ্যবহুল এই আলোচনা সভার শেষে জনাব শশাঙ্ক বরণ রায় তরুণদের নিয়ে তাঁর আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,” ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি একটি ছোট উদ্যোগও নেয়, একটা চারা রোপণ করে কিংবা একটা তারামাছ সমুদ্রে ছেড়ে দেয় তা-ও পরিবেশে একটি বিশাল অবদান রাখে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পরিবর্তনের জন্য আমাদের ব্যপ্তি, ঐক্য বাড়াতে হবে। দার্শনিক, রাজনৈতিক জায়গাগুলো স্পষ্ট করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীতি, দর্শনের উপর নিয়ন্ত্রণ তৈরী করতে হবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক পুনঃনির্মাণ নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষকে কেন্দ্রে রেখে পৃথিবীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ভয়াবহভাবে যেভাবে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তা পরিবর্তন করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন,” তরুণরা এই কাজে নেতৃত্ব দেবে, একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলবে। তরুণদের পাশাপাশি অন্যান্যরাও এগিয়ে আসলে একটি সামগ্রিক পরিবর্তন আনা কঠিন কিছু নয়।”
সর্বশেষ পরিবেশ বিষয়ে আরো জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করা, মূল্যবোধ সৃষ্টি, আশাবাদ বিস্তৃত করা, অপচয় রোধ ইত্যাদি সচেতনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে এবং কোভিড সিচুয়েশন সকলের সুস্থতা কামনা করে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে লাইভটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাফিউ আহমেদ।
পরবর্তীতে আরো এমন শিক্ষাপ্রদ লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
রিপোর্টিং,
সানজিদা রশিদ,
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সদস্য, আর্থ কেয়ার ইনিশিয়েটিভ।